Redrum 2022 Review: পরিচালনা করেছেন ভিকি জাহেদ। সঙ্গে রুমেল আহমেদ, হাসবি ইসলাম অর্পন, মেহজাবিন চৌধুরী, আজিজুল হাকিম। বিখ্যাত সংগীতশিল্পী সোহেলকে তার শোবার ঘরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। লাশ উদ্ধারের সময় তার স্ত্রী নীলা শান্তিতে ঘুমাচ্ছিল। তদন্তের দায়িত্ব নেন সোহেলের ছোটবেলার বন্ধু গোয়েন্দা রাশেদ।
ওয়েব ফিল্ম- রেডরাম (২০২২)
ধরন-ঃ ক্রাইম, মিস্ট্রি , থ্রিলার
পরিচালক-ঃ মি.টুইস্ট খ্যাত ভিকি জায়েদ
অভিনয়ে-ঃ নিশো, মনোজ কুমার,মেহজাবিন, নাসির উদ্দিন খান, নাদিয়া,
রানটাইম-ঃ ২ ঘন্টা ১২ মিনিট
রেটিং-ঃ ৯/১০
অসাধারণ, অনন্য, অনবদ্য- বিশেষণ তিনটি দিয়ে ‘রেডরাম’ ওয়েব ফিল্মকে বিশেষায়িত করলে মনে হয় না ভুল হবে। দুই ঘন্টা বারো মিনিটের এই ফিল্মের পুরো কাহিনী জুড়েই ছিল থ্রিলার। যার প্রতি পরতে পরতে রোমাঞ্চ আর টুইস্টে ভরপুর। মনে হবে এই বুঝি কাহিনী নতুন মোড় নিবে।
এর সব থেকে প্রশংসনীয় দিক আমার কাছে মনে হয়েছে একদম শেষ মিনিট অবধি ফিল্মের যে থ্রিলার, রোমাঞ্চকর অনুভূতি তা বজায় ছিল। অন্য অনেক রোমান্টিক থ্রিলার ফিল্মে যেমন দেখা যায় শেষ হবার কিছু আগেই সব কিছু খোলাসা হয়ে যায়। এই দিক থেকে সম্পুর্ণ ব্যতিক্রম ছিল ভিকি জাহেদ পরিচালিত এই ফিল্ম। একদম শেষ মুহুর্তে গিয়ে ঘটনার যে মোড় তা যে কোন দর্শককের কল্পনার বাহিরে। যেকোন বয়সের দর্শককে তা অবিভূত করবে, বিষ্মিত করবে। গল্পের শুরুটাও খুবই ইন্টারেস্টিং। আস্তে আস্তে গল্প যত আগাতে থাকে টুইস্ট তত বাড়তে থাকে। একবারের জন্যও মনে হবে না গল্প খুব ধীরে বা খুব দ্রুত আগাচ্ছে। প্রতি মুহুর্তে থাকবে উত্তেজনা এবং আমাদের স্বাভাবিক যে চিন্তা তার ১৮০ ডিগ্রি এ্যাংগেলে পরিবর্তন।
পরিচালক আর একটি বিষয়ে প্রশংসার দাবি রাখে তা হচ্ছে ‘মিডিয়া ট্রায়াল’। প্রমাণিত হোক আর না হোক, সত্য হোক আর মিথ্যা; বিচারের আগেই কাওকে দোষী সাব্যস্ত করে সামাজিক ভাবে ধসিয়ে দেয়ার নামই মিডিয়া ট্রায়াল। মিডিয়া ট্রায়ালের ফলে একজন নির্দোষ ব্যক্তি কি পরিমাণ মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে যায় পরিচালক খুব স্মুথলি ফিল্মের মধ্যে সে বিষয়টি তুলে ধরেছেন। আর একটি শিক্ষণীয় বিষয় বা এই গল্পের ম্যাসেজ যে ছোট একাটি অন্যায় বা মিথ্যা মানুষের জীবনকে কি পরিমাণ বিভীষিকাময় করে তুলতে পারে – তা খুব সুন্দর ভাবে পরিচালক পর্দায় তুলে এনেছেন।
শিল্পীদের অভিনয়
এই ফিল্মে অভিনয় করেছে আফরান নিশো, মেহজাবীন চৌধুরী, মনোজ কুমার প্রামাণিক, নাদিয়া, নাসির উদ্দিন খান, আজিজুল হাকিম সহ আরো অনেকেই। প্রত্যেকের অভিনয় অসাধারণ হয়েছে। আরফান নিশো এর আগে ভিডিও স্ট্রিমিং প্লাটফর্মে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। এই ফিল্মে তার গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় ছিল সব থেকে বেশি ইন্টারেস্টিং। বিশেষ করে তার ডায়লগ, অঙ্গভঙ্গি এবং গোয়েন্দা হিসেবে সত্য মিথ্যা যাচাই করার যে দক্ষতা অর্থাৎ সম্পুর্ণ চরিত্রটিকে তিনি খুব সাবলীল ভাবে তুলে পর্দায় তুলে ধরেছেন।
মেহজাবিন ছোট পর্দার অভিনেতা হিসেবে আগে থেকেই জনপ্রিয়। কিন্তু এটি তার অভিনীত প্রথম ওয়েব ফিল্ম। ফিল্মে তার নীলা চরিত্র ছিল খুবই শক্তিশালী এবং দেখে মনে হয়েছে একের ভিতর অনেক গুলো সত্তা। তার বিভিন্ন সময় যে এক্সেপ্রেশন যেমন- বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী, গর্ভাবস্থায় যে এক্সেপ্রেশন, কারাবন্দী এবং মিডিয়া ট্রায়ালে যে মানসিক অবস্থা- সব মিলিয়ে তার অভিনয় ছিল একদম ন্যাচারাল। মনোজ কুমার প্রামাণিক এবং নাদিয়ার সংলাপ বলার ধরণ এবং অভিনয় যেকোন দর্শকের মন ছুঁয়ে যাবে।
সব মিলিয়ে বলা যায় বাংলাদেশে থ্রিলার মুভির পেক্ষাপটে এটি একটি অসাধারণ কাজ। একই সাথে দেশের ভিতর এত সুন্দর একটি থ্রিলার মুভি তৈরীর জন্য রেডরাম’র পুরো টিম
অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য।
Happy watching