BollywoodComedyDramaFamily

পণপ্রথাকে প্রচার করা হয়েছে ‘‌রক্ষা বন্ধন’‌–এ

আনন্দ এল রাই পরিচালিত ‘‌রক্ষা বন্ধন’‌-এর পোস্টারে দেখা গিয়েছে অক্ষয় কুমারকে জড়িয়ে রয়েছেন তাঁর চার বোন, যা দেখে ভাই-বোনের উষ্ণ ভালোবাসার ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠবে। তবে যখনই সিনেমাটি শুরু হবে এবং আমলা লালা (‌অক্ষয়)‌ ও তাঁর চার বোনেদের সঙ্গে দেখা করব, তখন সেই ভালো অনুভূতির খুব স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যু ঘটবে। সিনেমা হলে বেশিক্ষণ ধরে বসে থেকে এই সিনেমা দেখার আনন্দ এক মুহূর্তে শেষ হয়ে যাবে। যদিও আনন্দ এল রাইয়ের সিনেমা মানেই হিরো গলি ও গলির আনাচে কানাচে নিজের পরিচিতি তৈরি করবে এবং এক কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যাবে। কিন্তু পরিচালকের এই সিনেমা দর্শকদের মন জয় করতে ব্যর্থ হবে।

Raksha Bandhan | August 11, 2022 (India) Summary:
Countries: IndiaLanguages: Hindi

ছবির গল্প: টয়লেট এক প্রেম কথা বা প্যাডম্যানের মতো অক্ষয় কুমারের রক্ষা বন্ধন-এও রয়েছে সামাজিক বার্তা। পণপ্রথা এই সিনেমার কেন্দ্রে রয়েছে। লালা তাঁর মরতে বসা মাকে দেওয়া চার বোনের বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন তাঁর বিয়ের আগে। লালার ছোটবেলার প্রেমিকা ভূমি পেডনেকার তাঁর সঙ্গে বিয়ের আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন। প্রত্যেকটি পাত্র অক্ষয়ের সঙ্গে দেখা করে পণ চায়। এই দাবিগুলি অবিরাম হাস্যকর এবং লালার কাছে কোনও বিকল্প না থাকায় তিনি তাঁর একটি কিডনি বেচে দেন এক বোনের বিয়ের জন্য। এখানেই রক্ষা বন্ধনের টুইস্ট শেষ হচ্ছে না। একটা কিডনি বেচার পর বাকি বোনেদের বিয়ের জন্য লালার কাছে রয়েছে দ্বিতীয় কিডনি। কিন্তু মানব শরীরে দু’‌টি কিডনির মধ্যে একটি চলে গেলে, অপরটির সাহায্যে বাঁচা যায়। তবে কি অক্ষয় কুমার তাঁর দু’‌টি কিডনি বিক্রি করে দেবেন?‌ এখানেই রয়েছে ক্ল্যাইম্যাক্স ও সিনেমার আসল মজা।

রক্ষা বন্ধন বাঁচাতে পারল না অক্ষয়ের ইমেজ একাধিক তারকা খচিত ছবি ‘সূর্যবংশী’ ছাড়াও তার শেষ পাঁচটি ছবি ‘লক্ষ্মী’, ‘বেলবটম’, ‘অতরঙ্গি রে’, ‘বচ্চন পান্ডে’ এবং ‘সম্রাট পৃথ্বীরাজ’ অক্ষয় কুমারের জন্য দুঃস্বপ্ন হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। অক্ষয় কুমার সিনেমা হিট করান। আয়করও সবচেয়ে বেশি দেন তিনি। কিন্তু, যে ছবিগুলো থেকে তিনি এই আয় করেছেন, তাদের ভাগ্য ভালো হয়নি বক্স অফিসে। তার আরেকটি ছবি ‘মিশন সিন্ডেরলা’ ওটিটি-তে মুক্তি পাবে এবং এর মুক্তির তারিখ এখনও ঠিক করা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে ‘রক্ষা বন্ধন’ ছবিটি অক্ষয় কুমারের জন্য জীবন রক্ষাকারী প্রমাণ হতে পারত। সাদা দাড়িতে নিখুঁত কালো গোঁফওয়ালা অক্ষয় কুমারকে দেখলেই বোঝা যায় তাঁর রোমান্টিক হিরো ছবির যুগ শেষ। আনন্দ এল রাইয়ের প্রশংসা যে তিনি অক্ষয়ের মতো একজন নায়ককে প্লেবয় ইমেজ দিয়ে চার বোনের বড় ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি করাতে পেরেছিলেন।

অভিনয় অভিনেতা অক্ষয় কুমার বড় ভাইয়ের চরিত্রে নিঁখুত অভিনয় করেছেন তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। বোনেদের বিয়ে নিয়ে চিন্তা, মাকে দেওয়া শেষ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা এবং নিজের প্রেমিকাকে চোখের সামনে হারিয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন অক্ষয় কুমার। ভূমি পেডনেকারের চরিত্র তাঁর জায়গায় ঠিক ছিল। এই সিনেমায় নবাগতা চার অভিনেত্রী যথেষ্ট ভালো কাজ করেছেন। তবে এই সিনেমার হিরো একজনই তা হলেই অক্ষয় কুমার।

ব্যর্থ পরিচালক সিনেমায় পণপ্রথা নিয়ে পরিচালক কাজ করলেও সমাজকে যে বার্তা দেওয়া উচিত তা যেন দিতে একটু বেশি সময় নিয়েছেন। কারণ বর্তমান সমাজ পণপ্রথাকে প্রশ্রয় দেয় না। এর পাশাপাশি মেয়েরাও শুধুমাত্র বিয়ের জন্য হা পিত্যেশ করে থাকেন না। সেদিক থেকে পরিচালকের চিন্তাভাবনা একটি সেকেলে লাগবে। সিনেমায় পরিচালক আবেগ, ভালোবাসা, মন ভাঙা সহ একাধিক ভাবাবেগকে দেখালেও সেভাবে জমিয়ে তুলতে পারেননি এই সিনেমাটি।

ছবির ত্রুটি তবে ‘রক্ষা বন্ধন’ ছবির চিত্রনাট্যে অনেক ত্রুটি রয়েছে। ঘটনাটি যেহেতু যৌতুকের কারণে কষ্টে থাকা এক ভাইয়ের, তাই দোকান বন্ধক রাখা থেকে শুরু করে কিডনি বিক্রির যাবতীয় কৌশল রয়েছে, কিন্তু কিডনি বিক্রির পর বোনের খবর পেয়ে রাখীর দিন ভাই অক্ষয় দিল্লির রাস্তায় যেভাবে দৌড়াচ্ছেন তা অবাস্তব এবং তার কোমর থেকে প্রবাহিত রক্ত, রক্তমাখা প্যান্টের দিকে সেভাবে কারও নজর নেই, তা লক্ষ্য করার মতো। দ্বিতীয় ত্রুটি হল বিরতির পর ছবির দ্রুত গতি। তার প্রথম বোনকে যৌতুক দেওয়ার পর, লালা বুঝতে পারে যে তাকে আসল কাজটি করতে হবে তার বোনদের লেখাপড়া করানো এবং লেখাপড়া করে যাতে তারা তাদের নিজের জীবনসঙ্গী বেছে নিতে পারে। এই ছবির আসল বার্তাও এটাই হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে ছবিটি গুটিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি গৌণ হয়ে যায়। পণ সমস্যার আসল সমাধান মেয়েদের স্বাধীন হওয়া এবং তাদের পছন্দের জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার স্বাধীনতার মধ্যে নিহিত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button