
ছবির ট্রেলার দেখে মনে হয়েছিল সিনেমাটি একটু অন্যরকমের হবে এবং দমদার প্রচার দেখে এই ছবি বক্সঅফিসে নিজের জায়গা করবে বলেই মনে হয়েছিল। তবে জানিয়ে রাখি সেরকমটা কিছুই হয়নি ‘শামশেরা’ নামের মতো সিনেমা সেভাবে জমে উঠতে পারেনি। ছবির চিত্রনাট্য বেশ একঘেঁয়ে। দর্শকরা বোর হয়ে যেতে পারেন। প্রায় চার বছর পর বড়পর্দায় ফিরেছেন রণবীর কাপুর কিন্তু তাঁর এমন এই ঝুল সিনেমা তাঁর কামব্যাককে কোথাও যেন ম্লান করে দিয়েছে। রণবীর কাপুরের শামশেরা এক বৈপ্লবিক কাহিনীকে অবলম্বন করে যা পরে রণবীরকে রবীন হুডে পরিণত করে। প্রোমোয় যেটা দেখা গিয়েছে সিলেমার প্লট তার থেকে আলাদা কিছু নয়। ছবিতে রণবীর কপুর প্রথমবার দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছেন, বিশেষ চরিত্রে রয়েছেন সঞ্জয় দত্ত, বাণী কপূর। রণবীর বাবা এবং ছেলের দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বাণী তাঁর প্রেমিকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। অপর দিকে সঞ্জয় দত্তকে তাঁর প্রতিদ্বন্দী হিসেবে দেখা যাবে।
কাহিনি: অত্যাচারী ধনীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছে শামশেরা (রণবীর কপুর)। নিজের লোকেদের স্বাধীনতা চায় সে। কিন্তু, কিছু উচ্চবিত্ত মানুষদের ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয় তাকে। শামশেরা প্রথম থেকেই এই লড়াইয়ে অনেকটা এগিয়ে ছিল। কিন্তু, ব্রিটিশ রাজের অধীনে কর্মরত শুদ্ধ সিং নামের এক ভারতীয় অফিসার তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে। শামশেরা সহ তার জাতিভুক্ত সকলেই আটক করে ফেলে সে। শামশেরার মৃত্যুর পর বিপ্লব থেমে যায়। তবে এর ২৫ বছর পর শামশেরার ছেলে বাল্লি বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ফিরে আসে। নতুন করে শুরু হয় বিপ্লব।
ছবির দৃশ্য: ছবির প্রথম দৃশ্যে ১৮০০ সালের পরাধীন ভারতবর্ষের চিত্র দেখা যায়। ভিএফএক্স ব্যবহার করে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল কাল্পনিক এক রাজ্য। যার নাম কাজা। কমিক বুক স্টাইলে সেই রাজ্যের ইতিকথা দেখানো হয়। কেন আদিবাসী এবং উঁচু জাতির মধ্যে লড়াই চলছে তাও জানানো হয়। এরপরেই শামশেরার এন্ট্রি। এই পর্যায় থেকেই কাহিনির গতি মন্থর হতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত স্লো পেসড অ্যাকশন ড্রামা দেখানো হয়েছে এই ছবিতে। এই সিনেমায় জাতি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই, একটি প্রতিশোধের গল্প, কিছুটা রোম্যান্স দেখানো হয়েছে। অবশেষে ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর গল্প বোনা হয়েছে।
সিনেমায় অভিনয়: এই সিনেমায় সব লাইমলাইট কেড়ে নিয়েছেন রণবীর কাপুর। তাঁর অভিনয় দক্ষতা আপনাকে মুগ্ধ করবে। চারবছর পর পর্দায় ফিরে নতুন অবতারে ধরা দিয়েছেন আরকে। আর এটাই হয়ত সিনেমা হলে দর্শকদের টানার ইউএসপি হতে পারে। রণবীর তাঁর ক্যাসানোভা অবতার থেকে বেরিয়ে এক নতুন রূপে ধরা দিলেন দর্শকদের কাছে। ভিলেন হিসাবে সঞ্জয় দত্ত মোটের ওপর ভালো। তিনি প্রত্যাশিত একঘেয়ে ভিলেন রূপে ধরা দিয়েছেন। এখনো কেজিএফ এবং পৃথ্বীরাজ মোডে রয়েছেন সঞ্জয় দত্ত। অন্যদিকে, বাণী কাপুর ওরফে সোনার গ্ল্যামার আগুন ধরাবে। তিনি এই সিনেমায় সারপ্রাইজ প্যাকেজ হিসাবে কাজ করেছেন, অভিনয় তাঁর গড়পড়তা। তবে অন্যান্য চরিত্রগুলিকে আরও একটু জায়গা দিলে ভালো হত।
ব্যর্থ পরিচালক: দুর্বল স্টোরিলাইন, অতি দুর্বল স্ক্রিনপ্লে এবং ডায়ালগ হওয়া সত্ত্বেও, দুই অভিনেতা নিজেদের জায়গা থেকে ছবিটিকে আপ টু দ্য মার্ক করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। এতদিন পর রণবীর কাপুরকে পর্দায় দেখে ভালো লাগবে। ইন্টারভ্যাল পর্যন্ত ছবির অ্যাকশন খুবই ভালো ছিল। শামশেরার গানও খুবই ভালো। তবে করন মালহোত্রা যেভাবে গল্প বুনতে চেয়েছিলেন, সেইভাবে বুনতে পারেননি। তাই বিরাট ক্যানভাসে ফিকে হয়ে গিয়েছে শামশেরার জৌলুস।